১:
ঘড়িতে তখন প্রায় বিকেল ৪.৩০। খাদের ধারের একটি মাইল স্টোন বলে দিলো okhrey এখনও ৪ কিমি। ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। একে ৯০০০ ফুট এর উচ্চতা, তারওপর এই বৃষ্টি। কনকনে ঠাণ্ডার জন্য বাসের জানালা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সামনের পাহাড়ি রাস্তা ৪ ফুট দূরেই সম্পূর্ণ ঝাপসা। মেঘের ভেলা গুলোকে ঠেলে সরাতে সরাতে ফগ লাইট জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে বাস।

Road to Okhrey in fog
সকালে দার্জিলিং মেইল দেরি করায় NJP থেকে অটো নিয়ে যখন SNT Terminus এ পৌঁছলাম, শুনলাম কিছুক্ষণ আগেই জোড়থাং এর একটি গাড়ি বেরিয়ে গেছে। SNT থেকে পরের শেয়ার জীপ্ ধরে জোড়থাং পৌঁছতে প্রায় ৩ ঘন্টা লাগলো। নেমে দেখি okhrey র জীপ্ সেদিনের মত বেরিয়ে গেছে। ওখানেই লাঞ্চ টা সেরে তাই বাসেই আসতে হলো। তবে বাসে সময় একটু বেশি লাগলেও ( প্রায় ৪ ঘন্টা ), জীপের থেকে আরামেই এলাম।
২:
কর্মা শেরপার হোম স্টে বাস ওয়ালাও চেনে। ঠিক জায়গামত আমায় নামিয়ে দিলেন। কোলকাতা থেকেই কর্মা শেরপার সাথে ফোনে ( 9933730484 ) বুকিং করে রেখেছিলাম। এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখ। জোড়থাং এ যথেষ্ট গরম, অন্তত শীত বস্ত্রের কোনো প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু কর্মা শেরপার হোম স্টের সামনে নেমে ঠান্ডায় ঠক ঠক করে কাঁপছি। বাসের ভেতরে জানালা বন্ধ অবস্থায় ঠাণ্ডার দাপট অতটা টের পাইনি। তার ওপর বৃষ্টির থামার কোনো নাম নেই। মনটা বেশ উদ্বিগ্ন হলো এই ভেবে যে, যার অমোঘ আকর্ষণে এত দূর ছুটে এসেছি, এই বৃষ্টির দাপটে সে না আমায় ফাঁকি দিয়ে অঝোরেই ঝরে পরে। রাস্তার ধারেই শেরপার দোকান। তার পাশেই হোমে স্টে।

Homestay at Okhrey

Okhrey village from homestay balcony
আমায় দেখেই এগিয়ে এলেন। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আমার ঘর টা দেখিয়ে দিলেন। অমায়িক ব্যবহার। ওনার স্ত্রী এবং পুত্রের সাথে আমার পরিচয় ও করলেন। ওনার উষ্ণ ব্যবহার আর আতিথেয়তায় পথের ক্লান্তি যেন অনেকটাই কমে গেল। গরম কফি উনি নিজে থেকেই পাঠিয়ে দিলেন ছেলের হাতে। পুরো পরিবারটি অতিথি সেবায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ঘরটায় ঢুকেই মন ভরে গেল। সামনের বারান্দা থেকে উন্মুক্ত পাহাড় শৃঙ্গ আমার সামনে। দূরের আবছা নীল পাহাড় গুলোর ফাঁকে ফাঁকে তখন খেলা করে বেড়াচ্ছে মেঘের দল। বৃষ্টির দাপট বাড়তে আর দাঁড়াতে পারলাম না বারান্দায়। ঘরে এসে জানালা দিয়েই উপভোগ করতে রাখলাম পশ্চিম সিকিমের এই সুন্দর পাহাড়ি গ্রামটির বিকেল থেকে সন্ধ্যে হওয়া। এদিকে ঠাণ্ডার দাপট তখন আমার হাড় মজ্জা অব্দি গিয়ে বিঁধছে। জ্যাকেট চাপিয়ে লেপের নিচে ঢুকেও সে ঠান্ডার থেকে রেহাই নেই। সিকিমের এই গ্রামগুলোতে তুংবা (Tungba) নামের এক পানীয়র প্রচলন আছে। প্রচন্ড ঠান্ডায় শরীর গরম রাখে। মিলেট দিয়ে এই পানীয় বানানো হয়। বাঁশের একটি সুন্দর পাত্রে মাথাটা ঢাকনা দিয়ে এটি পরিবেশন করা হয়। ঢাকনাটাি ফুটো করে বাঁশের একটি নল পাত্রর নিচ অব্দি দেয়া থাকে, এটাকেই straw এর মত ব্যবহার করা হয়। সাথে আলাদাভাবে গরম জলের একটি ফ্লাস্ক দেওয়া হয়, যেটা তুংবা তে ঢেলে নল দিয়ে টানতে হয়। একটি হারিকেন বা লণ্ঠনের আয়তনের এই তুংবা। ঠান্ডায় কাবু হয়ে কর্মা কে বললাম তুংবা নিয়ে আসতে। দু এক চুমুক টেনে আর পোষাল না। ডিনার টা তাড়াতাড়ি সেরে লেপের নিচে আশ্রয় নিলাম সেদিনের জন্য।
৩:
পরের দিন সকালে কর্মা শেরপা নিজে দায়িত্ব নিয়ে আমায় নিয়ে গেলেন Okhrey Monastery.

Okhrey monastery

Chorten at Okhrey monastery

Peace flags at Okhrey Monastery

House of the lamas at Okhrey monastery
সৌভাগ্যক্রমে আজ আকাশ পরিষ্কার। পাহাড়ের ঢালে খুব সুন্দর এই monastery. মূল গুম্ফার পাশেই সাদা দুটো চোরতান। পাশেই বৌদ্ধ prayer wheel এবং সাদা পতাকা পতপত করে উড়ছে। গুম্ফার পেছনের দিকে লামাদের থাকার ঘর। এরপর কর্মা দাজু আমায় নিয়ে এলেন Hilley তে। Varsey Rhododendron Sanctuary র অন্যতম প্রবেশদ্বার হল এই Hilley।

Entry point to Varsey Rhododendron Sanctuary
কর্মা দাজু আশ্বাস দিলেন যে আমি ভার্সে ঘুরে নিচে নেমে আসার আগেই উনি ফিরে আসবেন। পাহাড়ি জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ৪ কিমি মতন ট্রেকিং করে ভার্সে পৌঁছতে হবে। মার্চ আর এপ্রিল, এই দুটি মাস হল রডোডেনড্রন এর সময়। Sanctuary র গেটে পারমিট বানিয়ে শুরু করলাম ট্রেকিং। ঘন সবুজ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সরু একফালি রাস্তা এঁকেবেঁকে চলেছে Sanctuary র বুক চিরে। জঙ্গলের ঘনত্ব কোথাও কোথাও এত বেশি, যে রোদের আলো প্রবেশ করছে না।

Trek begins

Resting shade for the trekkers

Lights and shades of Varsey forest
গ্রাডুয়াল ট্রেকিং রুট বলে, খুব বেশি সমস্য হচ্ছে না দম নিয়ে। মিনিট ৩০ হাঁটার পরেই দেখা পেলাম রডোডেনড্রন এর। লাল থোকা থোকা এই ফুলটি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে আরও ওপরে ওঠার জন্য ।

First glimpse of rhododendron in the trek
মনটা আশ্বস্ত হলো এইটা ভেবে যে যাক, কাল বিকেলের ভয় টা অমূলক। বৃষ্টিতে ফুলগুলি ঝড়ে পড়েনি তাহলে।যতই এগোচ্ছি, রডোডেনড্রন সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোটামুটি দেড় ঘন্টায় পৌঁছে গেলাম ভার্সের টেবিল টপে। যেদিকেই তাকাচ্ছি, ছবির মত লাগছে। লাল, সাদা, গোলাপী রডোডেনড্রন এ ছেয়ে আছে পাহাড়।

Flock of pink rhododendron

White rhododendron

Beautiful pink rhododendron flowers
যেন কোনো এক উৎসবে সেজে ওঠা এক পাহাড়ী তন্বী। ১০,০০০ ফুট উচ্চতা এই ভার্সের। মেঘলা আকাশ। আমার সামনে একেকটি গাছের পাতা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না, সম্পূর্ণ ভাবে ঢেকে আছে ফুলের বাহারে।

Tree full of pink rhododendron
পাহাড় যেন আজ মেতেছে আবীর খেলায়। সামনের পাহাড়গুলো সেজে আছে সবুজ আর লালে। মেঘের আচ্ছাদনের মধ্যে দিয়ে উকিঁ মারছে দূরের পাহাড়গুলো এক নীলচে আভা নিয়ে।

Guras Kunj at the hill top of Varsey

Buddha statue at Guras Kunj
আকাশ মেঘলা না থাকলে এখান থেকেই দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। আমি অবশ্য এপ্রিল মাসের পাহাড়ে এসে কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শন পাবো সেই আশাও করিনি। এই Rhododendron Sanctuary তেই অবস্থিত গুরাসকুঞ্জ ( Guraskunj ). আমার আজকের গন্তব্য এই অবধি। পূর্ব পরিকল্পনা থাকলে এই গুরাসকুঞ্জে থাকার ব্যবস্থা আছে। প্রকৃতির এক অমোঘ আকর্ষণে বেশ কয়েক ঘন্টা আটকে পড়লাম এই ফুলের উপত্যকায়। সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে উপলব্ধি করলাম ভার্সেকে। অবশেষে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি দেখে নামতে শুরু করলাম। নামতে সময় লাগলো অনেক কম। ৩.২০ নাগাদ গেটে পৌঁছে দেখি কর্মা দাজু দূর থেকে হাত নাড়ছেন আমার দিকে। যেন তাঁর কোনো আত্মীয় এভারেস্ট জয় করে ফিরলো , মুখের অভিব্যক্তি টা অনেকটা সেরকম। বাইরের মানুষদের কেও বড় আপন করে নিতে পারে এই পাহাড়ি মানুষগুলো। এই মুহূর্তে এই স্বর্গীয় সৌন্দর্যে আচ্ছন্ন হয়ে আজ আর অন্য কোথাও যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কর্মার হোম স্টে তে এসে জমিয়ে এক মগ কফি নিয়ে বসলাম রুমের বারান্দায়।

Sunset with tea from balcony
মেঘের ফাঁকে ফাঁকে ছিটকে আসা রঙের খেলা দেখতে দেখতে পাহাড়ের সূর্যাস্ত উপভোগ করলাম মনপ্রাণ দিয়ে। গোধূলির শেষ আলোয় বেরিয়ে Okhrey র মিষ্টি গ্রামটা একটু পায়ে হেঁটে ঘুরে এসে দিনটা শেষ করলাম রাত্রের দূর পাহাড়ের গায়ে তারার মতন আলোর ঝিকিমিকি দেখতে দেখতে।

Step farming at Okhrey

Strolling in the Okhrey village in late afternoon
৪:
আজ তৃতীয় দিন। সকাল নটা নাগাদ জলখাবার সেরে কর্মা শেরপাকে বিদায় জানিয়ে রওনা দিলাম বার্মিওকের উদ্দশ্যে। স্থানীয় এক শেরপা তাঁর গাড়িতে আমায় কিছুটা রাস্তা এগিয়ে দিলেন। যেখানে উনি নামালেন, সেইখান থেকে বার্মিওকের শেয়ার জীপ্ পেয়ে গেলাম। Bermiok এবং Hee কে বলা হয় যমজ গ্রাম। ৫৯০৫ ফুট উচ্চতায় এই দুই যমজ গ্রাম। অমরজিত বাবুর হোটেলে আগেই বুকিং করে রেখেছিলাম। বেশ মিশুকে এই বাঙালি ভদ্রলোক। হোটেলের নাম খানাও বেশ সুন্দর, Hotel Silent Valley ( 9831833588 ). উল্লেখযোগ্য হলো এই হোটেলটির রুফ টপ ডাইনিং হল টি। সামনের দিকটা পুরোটা কাঁচ লাগানো এবং সেখান থেকে উন্মুক্ত ভিউ পাহাড়ের। দুপুরের পরে বেরিয়ে পড়লাম পাহাড়ি রাস্তায়। পাহাড়ের গা বেয়ে ছোট ছোট রাস্তা আর পাহাড়ের কোলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েক ঘর বসতি। এই হলো এই বার্মিওক গ্রাম। এই গ্রামে এক প্রথা আছে, কোনো বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের দিন সেই গৃহকর্তা বা গৃহকর্তী গ্রামের সকলকে পেট ভরে খাওয়ান। গ্রামের একটি বাড়িতে দেখলাম আজ সেই ছাদ ঢালাইয়ের উৎসব চলছে।

People of Bermiok village
হালকা ঠান্ডায় পড়ন্ত বেলায় পাহাড়ের ঢাল বেয়ে হেঁটে হেঁটে এই সহজ সরল মানুষগুলোর মাঝে মিশে যেতে বেশ লাগছিলো। পাহাড়ের ঢালে ঢলে পড়া মিঠে মোলায়েম আলোর মতোই এই স্বপ্নপুরীতে কোথাও একটি স্কুল…তার সামনে একটি খেলার মাঠে চলছে ফুটবল খেলা, আবার কোথাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েকটি পরিপাটি কাঠের ঘর এবং সেই ঘরের সামনে বসে থাকা তার বাসিন্দাদের মুখের পরম শান্তির ছোঁয়া। সবই যেন কোনো ক্লল্পনাপ্রবণ শীিল্পীর এক কল্পনার জগৎ।

School and the playing ground at Bermiok

Bermiok hills

Bermiok village houses
অদ্ভুত এক ভালো লাগা জন্মায় এমন এক গ্রামের স্পর্শে এসে। সন্ধ্যা নামার আগে গেলাম গ্রামের হাটে। বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান ছাড়াও চোখে পড়লো বেশ কিছু ফুল গাছের দোকান।

Flower seller at Bermiok
সদাহাস্য মহিলা দোকানীরা সেই ফুলগাছগুলোরই পরিবারের সদস্য মনে হচ্ছে। এই বাজারের কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়ি বুক করে নিলাম পরের দিনের জন্য। Silent Valley তে ফিরে সন্ধ্যাটা জমিয়ে আড্ডা হলো অমরজিত বাবুর সাথে পাহাড়ের গল্প নিয়ে। ডিনার সেরে নিস্তব্ধ উপত্যকার রাতের নিস্তব্ধতায় ডুব দিলাম সেদিনের মত।
৫:
অল্পবয়সী ড্রাইভারটি তাঁর alto নিয়ে ঠিক সময় হাজির সকালবেলায়। রওনা দিলাম ছায়াতালের পথে। কিছুটা যাওয়ার পরেই শুরু হলো চড়াই রাস্তা। পাহাড়টাকে পাক খেয়ে খেয়ে পৌঁছে গেলাম ছায়াতাল। মেঘ আর সূর্যের নিরন্তর লুকোচুরি খেলা থামার কোনো লক্ষণ নেই। ৬০০০ ফুট উচ্চতায় এই হ্রদ। হ্রদের জলে পাহাড়ের ছায়া আর মেঘের আড়ালে থাকা সূর্যের ছায়া মিশ্রিত হয়ে এক সুন্দর স্নিগ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

Beautiful Chayataal

Reflection of sun on the waters of Chayataal

Cottages at Chayataal
হ্রদের ধারে একটি মন্দিরও আছে। আমার ড্রাইভার দেখলাম হ্রদের ধারে কোনো এক শাক কুড়োনোয় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এই ছায়াতালেও একটি গেস্ট হাউস আছে থাকার জন্য। মন্ত্রমুগ্ধের মত ছায়াতালের ছায়ায় বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে পাড়ি দিলাম সিরিজুঙ্গার পথে।
৬:
১১.২০ নাগাদ গাড়ি এসে যে জায়গায় আমায় ছাড়লো, সিরিজুঙ্গা জলপ্রপাত দেখতে হলে এখান থেকেই নিচের দিকে নামতে হবে। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে সিঁড়ি করা আছে। আর সময় নষ্ট না করে নামতে শুরু করলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখি এক গ্রামবাসী কাঁধে বিশাল এক ঝুড়ি ঝুলিয়ে একই রাস্তায় নামছেন।

The farmer seen on way to Sirijunga fall
মাথায় তাঁর নেপালী টুপি। পেছনের কচি সবুজ পাহাড়ি বনানীর মাঝে খুব মানানসই তার অস্তিত্ব। এই রাস্তার একেক বাঁকে যেন একেকটি আলাদা আলাদা জলছবি অপেক্ষা করে আছে আমার লেন্স বন্দী হওয়ার জন্য। কোথাও বা স্টেপ ফার্মিংয়ের মাজখানে ছোট্ট একচিলতে কুঁড়েঘর। আবার কোথাও পাহাড়ের ঢালের একেবারে শেষ কোণে বাগান ঘেরা কোনো এক স্বপ্নের বাড়ি।

Step farming on way to Sirijunga fall

Beautiful house on hill top
কোনো শব্দই পরিপূর্ণ নয় সেই সৌন্দর্য বোঝানোর জন্য। বেশ কিছুটা নামার পর পেলাম একটা কাঠ গুদাম।

Wood warehouse while trekking to Sirijunga

The roadway to Sirijunga – till this point vehicles can come
এই গুদাম ঘরের পাশ দিয়ে একটি পাথুরে গাড়ির রাস্তাও চোখে পড়লো। ওনাদের জিজ্ঞেস করে বুঝলাম যে এই অব্দি গাড়িতেও আসা যেত। তাতে অবশ্য দুঃখ পেলাম না, কারণ এই যে ৩০০ সিঁড়ি নামলাম এতে প্রকৃতির এক অসামান্য রূপের সাক্ষী হলাম। কিন্তু এরপর ওনারা যেইটা বললেন, তাতে আমার পিলে চমকে যাওয়ার উপক্রম। বলে যতটা এসেছি এতক্ষন, তা নাকি জলপ্রপাতের রাস্তার ২৫% ও নয়! এই পয়েন্ট এই গ্রামের শেষ। এরপরের যে যাত্রা, তা সম্পূর্ণ আমার একার। নিচ অব্দি নেমে কোনো সাহায্যের হাত আর পাবো না। সিঁড়ি গোনার ব্যাপারটা ততক্ষনে আমার মাথা থেকে মিলিয়ে গেছে আগামী ৭৫% এর দাপটে। ফিরতি পথে এতগুলো সিঁড়ি যে উঠতে হবে, এইটা মাথায় আসতেই বুকের ভেতরটা কেমন যেন হালকা হতে শুরু করলো। যাইহোক, এতটা এসে পিঠটান দেয়ারও কোনো মানে হয় না। সবার আগে ড্রাইভারকে ফোন করে বলে দিলাম এই পয়েন্টে এসে দাঁড়াতে ঘন্টা খানেক পির।শুরু করলাম নামা আবার। এ যেন পাতাল প্রবেশের সিঁড়ি। শেষ আর হয় না। অবশেষে এসে পৌঁছলাম সিরিজুঙ্গা জলপ্রপাতের একেবারে গোড়ায়।

Sirijunga fall
লিম্বু সম্প্রদায়ের এক বিখ্যাত প্রচারক ছিলেন এই সিরিজুঙ্গা। তাঁর নামেই এই জলপ্রপাতের নাম। প্রায় ২৫০ ফুট ওপর থেকে পড়ছে এই জলপ্রপাত, যার উৎস কালেজ খোলা ও ঋষি খোলা নদীর থেকে। এই জলপ্রপাতের পাশেই এক অকৃত্রিম গুহা, যাকে বলা হয় Sirijunga Cave. বর্ষার সময় এই সিরিজুঙ্গা কি ভয়ংকর সুন্দর হয়ে উঠবে তা স্পষ্টই আন্দাজ করতে পারলাম। নিজের মনের ভয় জয় করে শেষ অব্দি আসার স্বার্থকতা খুঁজে পেলাম জায়গাটি দেখে। ওঠার পথে কষ্ট তো হলোই। তবে ওই যুদ্ধ জয় করার আনন্দটা সেই কষ্টটাকে অতিক্রম করে আমায় পৌঁছে দিলো সেই কাঠ গুদাম অব্দি। ড্রাইভার ততক্ষনে এসে গেছে।
৭:
গাড়ি নিয়েই এবার এলাম Sirijunga Yuma Mangheem। সিরিজুঙ্গার বহু তথ্যে ও স্মৃতিতে সাজানো এই মন্দির। লিম্বু সম্প্রদায়ের প্রচার একেবারেই অপছন্দ ছিল তখনকার তিব্বতী শাসন কর্তাদের। অবশেষে একদিন সিরিজুঙ্গা কে একটি গাছের সাথে বেঁধে তীর ধনুক দিয়ে হত্যা করা হয়।

Sirijunga Yuma Mangheem
আমার পরবর্তী গন্তব্য bermiok monastery. আর পাঁচটা পাহাড়ি monastery র মতন সুন্দর সাজানো গোছানো আর রঙিন এই monastery. Monastery র গায়ের জানালাগুলো আর প্রবেশদ্বার টি ছিল খুবই আকর্ষণীয়।

Bermiok monastery

Beautiful window of Bermiok monastery
Bermiok monastery থেকে আরো কয়েক পাক উঠে দর্শন পেলাম সিংহবাহিনী মহাকালী মন্দির। পাহাড়ি উপত্যকায় সচরাচর এত বড় কালী মন্দির চোখে পরে না।

Singhabahini Mahakali Temple
আজই আমার শেষ রাত বার্মিওকে। ডিনার এর পর অনেক্ষন সাইলেন্ট ভ্যালির রুফ টপ ডাইনিং হল এ বসে বাইরের মেঘ বিহীন নক্ষত্রখচিত আকাশের ক্যানভাসে আঁকা bermiok কে মনপ্রাণ দিয়ে উপলব্ধি করলাম। সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট করে অমরজিত বাবুকে আর bermiok কে বিদায় জানিয়ে জোড়থাং এর পথে রওনা দিলাম। পাহাড়ের কোলে এই চারটে দিনের অভিজ্ঞতা চিরকালের জন্য আমার বুকের গভীরে সযত্নে রাখা থাকলো ।

Hi! I am from Kolkata, India. Travelling and photography is my passion. As I love landscape photography most, travelling goes hand in hand with it. Since my matriculation days I started travelling. I have also penned down a book on my travelling which is available in Amazon in the name of Ghuranchandi – Part 1. Whatever travel experiences I have, I have shared those in my blog in the form of travel stories.