১:
সুন্দরবন অন্তর্ভুক্ত ১০০ র ও বেশি ব দ্বীপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বঙ্গোপসাগরে। এদেরই মধ্যে একটি হলো মৌসুনী। মৌসুনী দ্বীপ। নামটার মধ্যে যেন এক অদ্ভুত এক মিষ্টতা ছড়িয়ে আছে। নির্জন একটি দ্বীপ, কয়েক ঘর সরল মানুষ, সবুজের আধিপত্যে মোড়া সমুদ্রতটে আছড়ে পড়ছে একের পর এক ঢেউ, বিকেলের সূর্য্য সেখানে শুধু আমার সাথেই কথা বলতে বলতে ঘুম পাড়ানির দেশে যাবে…এমনই একটা জলছবি মনে গেঁথে গেছিলো মৌসুনী নিয়ে। ছবিটি বাস্তবে অনুভব করার সুযোগ পেয়ে গেলাম ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি এক শনিবার। সঙ্গী হলো আমাদের ঘুরণচন্ডি গ্রুপের বাকি তিন সদস্য – স্নেহাংশু, লীনা এবং বিদিশা। থাকার ব্যবস্থা ইমেইল এর মাধ্যমেই ঠিক হলো শিন্টু বাবুর “নেচার স্টাডি ক্যাম্প” নামক দুটি টেন্টে।
![Mousuni Island tour plan](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-island-tour-plan.jpg?resize=1024%2C678&ssl=1)
Destination Mousuni Island
২:
শিয়ালদা থেকে নামখানা লোকাল ঘন্টা তিনেকে আমাদের পৌঁছে দিলো নামখানা। স্টেশন থেকে সাইকেল ভ্যানে করে ফেরিঘাট। ফেরি সার্ভিসে হাতানিয়া-দোয়ানিয়া টপকে ওপারে গিয়ে টোটো নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছলাম। বাস স্ট্যান্ড থেকেই টাটা ম্যাজিক ছাড়ে কিছুক্ষন পরপর আর এরা দুর্গাপুর ঘাটের নৌকো ছাড়ার সময়ের সাথে খাপ খাইয়েই পুছে দেয় যথাসময়। আধ ঘন্টা লাগলো আমাদের দুর্গাপুর ঘাট পৌঁছতে। ঘাটে খবর নিয়ে জানতে পারি বাঘডাঙ্গার মোটর চালিত খোলা নৌকো ছাড়তে তখনও মিনিট পনের বাকি। এমনিতে এক ঘন্টা পরপর নৌকো তবে ১২ টার পরের নৌকোটি আবার সেই দুপুর ২.৪৫এ। এই জলপথ ছাড়া মৌসুনী দ্বীপ সভ্যতার আলোর থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। মানুষ এবং জীবন যাপনের জন্য বহু নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী একইসাথে এই নৌকোয় পারাপার হয়। পছন্দমতো জায়গা বেছে নিয়ে আমরা গুছিয়ে বসে গেলাম নৌকায়। যথাসময় নৌকো ছেড়ে চিনাই নদী পার করে আমরা পৌঁছলাম বাঘডাঙ্গা ঘাট।
![Mousuni Island Baghdanga ghat](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-baghdanga-ghat.jpg?resize=1024%2C621&ssl=1)
At Baghdanga Ghat
মৌসুনী দ্বীপের এটাই প্রবেশ বিন্দু বলা যেতে পারে। দোকানপাট বাজারহাট যা কিছু, এদিকটায় বেশি। ঘাটের থেকে উঠেই চোখে পড়লো কয়েকটা টোটো এবং মোটর চালিত সাইকেল ভ্যান দাঁড়িয়ে। পাশের একটি দোকানে জলখাবার আর চা খেয়ে আমরা টোটো ভাড়া করে রওনা দিলাম বালিয়াড়ি গ্রামের উদ্দেশ্যে।
৩:
বাগডাঙ্গা ছাড়িয়ে মিনিট পাঁচেক এগোতেই পেছনে রয়ে গেলো পাকা বাড়ি ঘর। বাঁধানো কংক্রিটের রাস্তার দুপাশে সবুজের সমারোহের মাঝে শুধু মাটি আর খড়ের বাড়ি। বালিয়াড়ি গ্রামটি দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে। যত এগোচ্ছি সে পথে জনবসতি ততই ক্ষীণ হচ্ছে। কংক্রিট ছেড়ে আমরা এখন মোরামের রাস্তায়। অন্যান্য গাছ গাছালি ফাঁকে ফাঁকে উকিঁ মারতে শুরু করেছে বালিয়াড়ির ঝাউ বন। ঘন সবুজের সমারোহের মাজখানে একফালি জমি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরানো আর তার মাজখানে দুটি বড় মিলিটারী রঙের টেন্টে। সামনে ছাতার নিচে দুটি প্লাস্টিকের টেবিল এবং কিছু চেয়ার। টেন্টের পাশের গাছগুলোতে বাঁধা আছে দুটি হ্যামক। বুঝলাম আমরা পৌঁছে গেছি আমাদের গন্তব্যে।
![Mousuni Nature Study Camp](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-nature-study-camp.jpg?resize=1024%2C678&ssl=1)
Our tent at Nature Study Camp on Mousuni Island
৪:
আমাদের অভ্যর্থনা জানালো বছর চোদ্দর এক কিশোর। টেন্ট দুটি সমুদ্রের দিকে মুখ করা। চারপাশে সবুজে ঘেরা। সামনে ১০ পা এগোলেই বালুকাবেলা, বেড়ার একটি ছোট্ট গেট পেরিয়ে ঢাল হয়ে গিয়ে সোজা নেমে গেছে সমুদ্রে। সমুদ্র এবং তার পাশাপাশি এতো কাছে সবুজের সমারোহের এমন মেল বন্ধন এর আগে খুব একটা দেখিনি। টেন্টের পেছনদিকের এক ফালি রাস্তা এঁকেবেঁকে গিয়ে হারিয়েছে ছোট্ট একটি গ্রামে। ব্যাগপত্র টেন্টে ঢুকিয়ে আমরা ঝুলন্ত হ্যামকে গা এলিয়ে দিলাম।
![Hammock at the Mosusuni island](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousini-nature-camp-hammock.jpg?resize=1024%2C678&ssl=1)
Relaxing on the hammock
আমি বেছে নিলাম সবথেকে দূরের হ্যামকটি যেটি বেড়ার ওই ছোট্ট গেট পেরিয়ে বালির ওপর দুটি গাছের মাঝখানে ঝোলানো। এক মুহূর্তে সমস্ত পৃথিবীটা যে কি সুন্দর হয়ে গেলো, ভাষায় ব্যক্ত করা কষ্টসাধ্য। হ্যামকে শরীর এলিয়ে চোখের সামনে ঘন নীল আকাশ উকিঁ মারছে গাছের পাতার কালেইডোস্কোপের ফাঁক দিয়ে।
![Mousini island Kaleideoscope](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousini-kaleideoscope.jpg?resize=1024%2C629&ssl=1)
Kaleideoscope of leaves over the head
তির তির করে বয়ে এসে মুখে চোখে আদর করে দিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের মিঠে হাওয়া। সমুদ্রও এখানে শান্ত, কান পাতলে শোনা যাচ্ছে ছোট ছোট ঢেউ গুলোর পাড়ে আছড়ে পড়ার ক্ষীণ আওয়াজ।গাছের পাতার ঘন বুননে তৈরী হয়েছে এক স্নিগ্ধ শীতল ছায়া হ্যামকের ওপর…ঠিক যেন যত্ন করে মুখের ওপর বিছানো মায়ের স্নিগ্ধ আঁচল। সত্যি কথা বলতে কি, এহেন পরিবেশে নিজেকে হারিয়ে ফেলা ছাড়া আর কোন গতি থাকে না। চোখে নেমে আসে এক নিবিড় সুনিদ্রার প্রলেপ।
৫:
ইতিমধ্যে আমাদের সঙ্গী হয়েছে ৪-৫ টি কচিকাঁচার একটি দল। তাদের কিচির মিচির শুনে সদ্য খুঁজে পাওয়া স্বপ্ন জগৎ থেকে বেরিয়ে বাস্তবে এলাম আমরা। বেলা গড়িয়ে তখন প্রায় ১.৩০ টা। বাচ্চাগুলো দেখলাম আমাদের খাওয়া দাওয়ার আয়োজনে ব্যস্ত। তাদের সাথে একটি প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ফাইল হাতে একমুখ হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে। ইনি বিপ্লব, কাগজপত্র মিলিয়ে নেওয়া এর কাজ কারণ বুকিং সবই হয় ইমেইল এ। মিনিট দশেক এখনো লাগবে খাওয়ার বাড়তে। রৌদ্রে ঝিকমিক করা সাদা বালি আর তার ওপর অনন্ত ঢেউয়ের আছড়ে পড়া হাতছানি দিয়ে ডেকেই চলেছে আমাদের।
![Mousuni island children](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-children.jpg?resize=1024%2C678&ssl=1)
Children who accompanied us at the tent
![Mousuni island sea beach](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-island-sea-beach.jpg?resize=1024%2C597&ssl=1)
Stranded boat on the beach
![Mousuni island conch shells](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-conch-shells.jpg?resize=1024%2C668&ssl=1)
Conch shells on the beach
সেই ডাকে সাড়া না দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। টেন্টের ভেতর থেকে ক্যামেরাটা নিয়ে একছুটে চলে এলাম একেবারে সমুদ্রতটে। অভিবাদন জানালো বালির ওপর মুখ উঁচিয়ে থাকা কিছু কোন শেলস, দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া ছোট ছোট লালা কাঁকড়ার দল,বালির ওপরেই নোঙ্গর করে রাখা একটি মাছ ধরা নৌকো এবং হওয়ার সাথেই তাল মিলিয়ে উড়ে বেড়ানো আরও কিছু কচিকাঁচা। বড় আনন্দ ওদের আজ সবার, ঘরে অতিথি পেয়ে। বড় আনন্দ আমাদেরও আজ এই আদিম প্রকৃতির ছোঁয়া পেয়ে। ব্রহ্মান্ডের এই প্রান্তরে এই মুহূর্তে প্রাণীজগৎ বলতে আমরা চারজন, এই কচিকাঁচার দল আর দূরের ওই গাছগুলো থেকে আসা পাখির কিচির মিচির।
৬:
লাঞ্চের পর আমাদের একজনেরও টেন্টে ঢোকার কোনো ইচ্ছে হলো না। হ্যামকেই কিছুটা জিরিয়ে নিয়ে ৪.৩০ টা নাগাদ চলে এলাম সমুদ্রের ধারে। আমাদের টেন্টের কাছেই আছে ব্যাক প্যাকারস ক্যাম্প, সেখানকার কিছু অতিথিদের এবার দেখতে পেলাম বালুচরে।
![Mousuni island relaxing bench](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-island-relaxing-bench.jpg?resize=1024%2C678&ssl=1)
The bamboo bench near our tent
জল এখন বেশ খানিকটা এগিয়ে এসেছে, নিশ্চই জোয়ার এখন। বলতে ভুলে গেছি ওই কচিকাঁচা দের দল ছাড়াও আমাদের ছায়াসঙ্গী হয়েছে একটি সারমেয় পরিবার। এদের মধ্যে সবথেকে কনিষ্ঠ যে শাবকটি সে একেবারে পায়ে গা লাগিয়ে হেঁটে চলেছে আমাদের সাথে।
![Mousuni island stray dog](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-island-stray-dog.jpg?resize=1024%2C678&ssl=1)
Local dog following us on the sea shore
একের পর এক ফ্রেম ধরা পড়ছে কামেরার পর্দায়। দিগন্তে তখন সূর্য পাটে যাবার প্রস্তুতি আর তার সেই রক্তিম আভায় একেক করে উদয় হচ্ছে মোচার খোলের মতো ছোট ছোট মাছ ধরা নৌকো। সোনালী আলোয় স্নাত হয়ে তারা যেন আজ বিশ্বজয়ী, এক বিশ্ব আনন্দ জয় করে তারা ফিরে আসছে তাদের প্রিয়জনের কাছে…তাদের প্রিয় মৌসুনীর কোলে।
![Mousuni island sunset](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-island-sunset.jpg?resize=1024%2C678&ssl=1)
Little girl waiting for her father to anchor the boat
![Returning boat at Mousuni island](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-island-returning-boat.jpg?resize=1200%2C795&ssl=1)
A fishing boat returning to shore at day end
![Mousuni island sunset time](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-island-sunset-time.jpg?resize=1024%2C678&ssl=1)
The setting Sun
সঠিক ফ্রেমটি ক্যামেরাবন্দী করতে আমি আর স্নেহাংশু ততক্ষণে ট্রাইপড হাতে নেমে গেছি এক গোড়ালি কাদামাটিতে। হ্যাঁ, বালুচরের পরে সমুদ্র ছোঁয়ার আগে কিছুটা জায়গা এই বিচ কাদামাটি। বিদিশা মেতেছে সেলফি তুলতে। আর লীনা? সে তখন ঢেউয়ের মাঝে কচিকাঁচাদের দলবদ্ধ করে অস্ত যাওয়া সূর্যের পানে চেয়ে তাদের ভারতের জাতীয় সংগীত গাওয়া শেখাচ্ছে। প্রতিটি প্রকৃতি প্রেমিক মনের আলাদা আলাদা ভালোলাগা গুলো ঝুড়ি ভর্তি করে পসার সাজিয়ে বসে আছে এই মৌসুনী। অন্ধকার নামা অবধি বালুচরেই বসে থাকলাম আমরা।
![Mousuni island silhouette](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-island-silhoutte.jpg?resize=1024%2C678&ssl=1)
Lovely colors of sunset against the silhouette
![Mousuni island blue hour](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-island-blue-hour.jpg?resize=1024%2C678&ssl=1)
The sea at blue hour
৭:
টেবিলের পাশে গোল হয়ে বসে সন্ধ্যের আড্ডা শুরু হলো গরম পেঁয়াজি, মুড়ি এবং চা এর সংযোগে। তার সাথে তাল মিলিয়ে একেক জনের জীবনের অলৌকিক কিছু অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করা। বাচ্চাগুলোকে যতই বলি এবার বাড়ি গিয়ে পড়তে বস,কে শোনে কার কথা! ওদের যে আজ উৎসব…অতিথি উৎসব! সে যাই হোক, একরকম জোর করেই ওদের ঘরে পাঠালাম। বিপ্লব এসে আমাদের রাতের খাবারের ব্যবস্থা করলো। নৈশভোজের পর প্রায় রাত ১২ টা অবধি আড্ডা মেরে আজকের মতো অবসর নিলাম সবাই। বিদ্যুতের সুবিধা এই গ্রাম অবধি এখনো পৌঁছয়নি। আলোর ব্যবস্থা সবই সোলারে। টেন্টের ভেতর বড় কার্লন এর গদির ওপর সুন্দর করে সাজানো বেড কভার, পাশে আবার ছোট্ট একটি প্লাস্টিকের টেবিল। ৩ জন এক টেন্টে অনায়াসেই থাকতে পারবে।
৮:
ভোরবেলা উঠে হাঁকাহাকি করাতে শুধুমাত্র লীনার ঘুম ভাঙ্গলো। বাকিরা তখন গভীর ঘুমে। দুজনেই হাঁটা লাগালাম সমুদ্রের দিকে। কালকের সেই সারমেয় শাবকটি যেন আমাদের জন্যই অপেক্ষা করেছিল। বালুচরে নামতেই এগিয়ে এসে আমাদের সঙ্গী হলো সে। ঝকঝকে আকাশ আলো করে আছে সকালের মিষ্টি সোনালী রোদ। অলসভাবে হেঁটে চলেছি বালুচরে। এরই মধ্যে হঠাৎ দেখি ১০০ ফুট দূরত্বে সামনে যে নৌকোটি নোঙ্গর করা অবস্থায় এতক্ষন দেখা যাচ্ছিল, সেটা এই মুহূর্তে আর নেই।
![Morning at Mousuni Island](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-island-sea-beach-morning.jpg?resize=1024%2C678&ssl=1)
Morning at sea beach
![Fog at Mousuni island sea beach](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-island-sea-beach-fog.jpg?resize=1024%2C678&ssl=1)
The strange fog at sea beach in the morning
ঝাপসা, সব ঝাপসা সামনে। অথচ সমুদ্রে দূর দগন্তে ভেসে বেড়ানো মাছধরা নৌকো গুলো পুরোপুরি দৃশ্যমান। ভালো করে ঠাওর করে বুঝলাম বিশাল এক দলা কুয়াশা আমাদের সামনে জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। সমূদ্রতট থেকে যেন একরাশ সাদা ধোঁয়া একটু একটু করে এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। আর কোথাও তার উপস্থিতি নেই। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এই স্থান ভিত্তিক কুয়াশা ঢেকে ফেললো আমাদের। পরিষ্কার অনুভব করলাম সে আমাদের এবং আশপাশের গাছপালা গুলোকে একটু একটু গ্রাস করে আরও এগোতে থাকলো। জীবনে এই প্রথম দেখলাম সমুদ্রতটে কুয়াশার এই অদ্ভুত স্থান ভিত্তিক খেলা, তাও আবার খটখটে রৌদ্রে! মিনিট ২০ এই খেলা চলার পর আবার সব ঝকঝকে, সব দৃশ্যমান। কুয়াশার পুরু আস্তরণে এতক্ষন দেখতে পাইনি যে কালকের সেই কচিকাঁচার দল কখন এসে উপস্থিত হয়েছে আমাদের সামনে। ওদের দেখেই লীনা দলে নিয়ে নিল। সমুদ্রের ধার ঘেঁষে বেশ কিছুটা হেঁটে বাচ্চাগুলোর হাত ধরে ঢুকে পড়লাম ওদের গ্রামে।
![Mousuni island village](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-island-village.jpg?resize=1024%2C678&ssl=1)
The road to the village
৯:
টেন্টে ফিরে দেখি বাকি দুজন উঠে খাওয়া দাওয়ার আয়োজনে ব্যস্ত। স্নান খাওয়া সেরে কচিকাঁচার দলকে বিদায় জানিয়ে একটি টোটো ভাড়া নিয়ে রওনা দিলাম কাঁকড়ামাড়ির উদ্দেশ্যে। ম্যানগ্রোভ এর ঘন জঙ্গলে একপাশ ঘেরা এই কাঁকড়ামাড়ি। জঙ্গলের ওপারে নদী গিয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। শক্ত মাটির মাঝে মাঝে খোপ খোপ করা কাদা মাটির নিচু জায়গা। এই খোপ গুলো কাঁকড়ার স্বর্গ রাজ্য।
![Mousuni island way to kakramari](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-island-way-to-kakramari.jpg?resize=1024%2C678&ssl=1)
Way to Kakramari
![Kakramari at Mousuni island](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-island-kakramari.jpg?resize=1024%2C678&ssl=1)
At Kakramari
এর থেকেই হয়তো জায়গাটির এই নাম। ফেরার আগে একটি গাছের ছায়া দেখে বসে বেশ কিছুক্ষন সুন্দরবনের ঘন সবুজের ঘ্রান নিতে নিতে ভাবছিলাম এই গ্রামের মানুষ গুলোর কথা। রহমত মিয়ার কথা। দুর্গাপুর ঘাটের পথে ম্যাজিক এ আলাপ হয়েছিল রহমত মিয়ার সাথে। রহমত মিয়ার ছেলে থাকে বর্ধমানে।
![Betel leaves at Mousuni island](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-island-betel-leaves.jpg?resize=1024%2C678&ssl=1)
Betel Leaves
![Mousuni island betel farm](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-island-betel-farm.jpg?resize=1024%2C678&ssl=1)
Betel farm
প্রতিবছর বর্ষায় নোনা জল উঠে আসে রহমত মিয়ার মৌসুনী দ্বীপের গ্রামের বাড়ির উঠোনে…মেঝেতে। নোনা জলে নষ্ট হয় তাঁর যত্ন করে ফলানো ফসল। নষ্ট হয় তাঁর ঘরের আসবাব পত্র। নষ্ট হয় মানুষের মন। বয়স হয়েছে ভদ্রলোকের। আর এই কষ্ট সহ্য করতে পারেন না। ৩-৪ মাস বর্ষার সময় পালিয়ে চলে যান তাঁর ছেলের বাড়ি। ভাবলে মন ভারী হয়ে যায়। যে মৌসুনী আমাদের মনে বয়ে আনে মৌসুমী বায়ুর মিষ্টতা, সেই মৌসুনী তেই প্রতিবছর জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন এই মানুষগুলো!! বিদায় মৌসুনী। আশা রাখি ট্যুরিজম এর সাথে সাথে এই রহমত মিয়াদের জীবন যাপনও যেন আরো উন্নত হোক।
![Mousuni island innocent children](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/mousuni-island-innocent-children.jpg?resize=1000%2C1509&ssl=1)
Happy and innocent little girl
© Arijit Kar
![](https://i0.wp.com/www.ghuranchandi.com/wp-content/uploads/2021/06/profile.jpg?resize=100%2C100&ssl=1)
Hi! I am from Kolkata, India. Travelling and photography is my passion. As I love landscape photography most, travelling goes hand in hand with it. Since my matriculation days I started travelling. I have also penned down a book on my travelling which is available in Amazon in the name of Ghuranchandi – Part 1. Whatever travel experiences I have, I have shared those in my blog in the form of travel stories.