১:
কিছুটা লং ড্রাইভ, কিছুটা পিয়ালী নামের মাধূর্য, কিছুটা সুন্দরবনের ছোঁয়া আর কিছুটা নিজের সাথে নিজের দেখা। এই চারের আকর্ষণে জুলাই মাসের এক সকালে বেরিয়ে পড়লাম গাড়ি নিয়ে পিয়ালী দ্বীপের পথে। সল্টলেক গেট থেকে পিয়ালী দ্বীপ ৭০ কিমি রাস্তা। এখন ঘড়িতে ৭.৩০। কামালগাজি বাইপাসের ওপর দিয়ে নতুন ফ্লাইওভার ধরে বারুইপুর পৌঁছে গেলাম ঝড়ের গতিতে। গোচরণ-ধসা রোডে উঠে কিছুটা এগোতেই পেতে লাগলাম পিয়ালী নদীর ছোঁয়া। দক্ষিণ বারাসাত ছাড়িয়ে কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে এলাম মহিষমারী বাজার। গ্রামের মধ্যে দিয়ে সরু রাস্তা। বর্ষায় আরও সুন্দরী হয়ে উঠেছে এই গ্রামগুলো।

On way to Piyali island
স্থানীয় লোকজনের কাছে পিয়ালী আজও কেল্লা নামে পরিচিত। পথের একেবারে শেষভাগে শনিবারের হাটের ভিড়ের মধ্যে দিয়ে এসে পৌঁছলাম কুলতালি স্লুইস গেট। এই ব্রিজ পার হলেই পিয়ালী দ্বীপ। বীজের এপার থেকেই চোখে পড়লো ওপারের পিয়ালী আইল্যান্ড ট্যুরিস্ট লজের গেট টা।
২:
ট্যুরিস্ট লজের বুকিং আগেই করে রেখেছিলাম ( Contact No – 9433435181 )। পিয়ালীতে থাকার জন্য এটিই একমাত্র লজ। সুবিশাল কমপ্লেক্স। ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ এই লজে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে এক ট্যুরিস্ট পরিবারের সাথে। মাঝরাতে একদল সশস্ত্র ডাকাত তান্ডব চালায় লজে। সেই ট্যুরিস্ট পরিবারের এক সদস্য আহতও হন গুলি তে। এই ঘটনার পর থেকে লজের ভেতরেই স্থানীয় থানা থেকে পুলিশ পোস্টিং করা আছে ২৪ ঘন্টা। ঘরগুলো একটু পুরোনো হলেও, আশপাশের সবুজ আর ম্যানগ্রোভ দেখে মনটা ভরে গেল। খাওয়াদাওয়ার ব্যাবস্থা লজের ভেতরেই। আমি বহু জায়গায় ঘুরেছি। পিয়ালী নদীতেই ধরা কাতলা মাছের কালিয়াটা বিশেষ যত্ন সহকারে খাওয়ালেন কেয়ারটেকার ভদ্রলোক। বাঙালি রান্না এত তৃপ্তি করে বোধহয় আর কোথাও খাইনি।

Complex of Piyali Island Tourist Lodge
৩:
দুপুরের পর বেরিয়ে গ্রামের হাটটা একটু ঘুরে দেখে পিয়ালী নদীর পারে গিয়ে একটি নৌকা ঠিক করলাম ঘন্টা দুয়েক পিয়ালীর বুকে নৌবিহারের জন্য। বছর চোদ্দর একটি ছেলে আমার মাঝি। সাথে আবার তার অর্ধেক বয়সী ভাই। দুই ভাইয়ের সাথে গল্প করতে করতে বেশ লাগছিলো শান্ত পিয়ালীর বুকে ভেসে বেড়াতে। নৌকোর পেটে দেখলাম হালকা জল দিয়ে জিয়ে রাখা বেশ কিছু ছোট মাছ। সেগুলোর মধ্যে আবার সাপের মত দেখতে কিছু বড় মাছ।

Boating on the Piyali river

Our boatmen
আকাশ মেঘলা তাই রোদের তাপ নেই। নদীর মাঝখান থেকে পিয়ালী দ্বীপের গাঢ় সবুজ দেখতে দেখতে এগিয়ে চললাম। দ্বীপের পারে কোথাও এক জেলে তার শেষ বেলার শেষ চেষ্টা করছে মাছ ধরার। পুরোনো একটি পরিত্যক্ত ভাঙা ঘাটের অবশিষ্ট অংশতে বসে স্থানীয় কিছু ছেলে ছোকরার দল তাদের বিকেলের আড্ডায় ব্যস্ত।

Fishing on Piyali river

Abandoned ghat beside Piyali river
দ্বীপের পারে থেকে থেকেই উকিঁ মারছে ম্যানগ্রোভ। পিয়ালী দ্বীপকে অনেকেই সুন্দরবনের একটি প্রবেশ দ্বার বলেন। পিয়ালী নদী দ্বীপটির বুক চিরে গিয়ে মিশেছে মাতলা নদীতে। দুই ঘন্টার নৌ বিহার যেন নিমেষেই শেষ হয়ে গেল পিয়ালীর রূপ দেখতে দেখতে।
৪:
পরেরদিন সকালে উঠে লজের কমপ্লেক্স টাই ভালো করে ঘুরে দেখবো ঠিক করলাম। ঘরগুলোর সামনের দিকেই একটি পুকুর আছে, বেশ বড়সড়। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিও শুরু হয়েছে সকাল থেকে। পুকুরের জলে শাপলা গুলোর ওপর টুপটাপ বৃষ্টির খেলা দেখতে বেশ লাগছে।

At the pond in the compound of Piyali island tourist lodge
পুকুর আর ঘরগুলোর মাঝখান দিয়ে একটি রাস্তা চলে গেছে পেছনের জঙ্গলের দিকে। গুটি গুটি পায় সেদিকে এগোলাম। কিছুটা গিয়ে কাঁচা রাস্তা শুরু। দুপাশে হঠাৎ দেখে মনে হচ্ছে যেন বন্যা কবলিত এলাকা। জলের ভেতর থেকে সুন্দরী গাছগুলোর অর্ধেকটা বেরিয়ে আছে। আসলে তখন জোয়ার, তাই কমপ্লেক্স এর ভেতরের এই ছোট ছোট খাঁড়ি গুলো জলে টইটম্বুর। ম্যানগ্রোভ এর এটাই চরিত্র। ঘন জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে এরকমই একটা খাঁড়িতে চোখে পড়লো একটি নৌকো বাঁধা। নৌকোর ওপরেই রান্না বান্না নিয়ে ব্যস্ত সেই মাঝিটি। বৃষ্টিতে কাঁচা রাস্তাটি কর্দমাক্ত। খুব বেশি এগোনো সম্ভব হলো না। যাঁরা শীতকালে আসবেন তাদের জন্য আরেকটি আকর্ষণ হবে পাখি দেখা। প্রচুর পরিযায়ী পাখির আনাগোনা এই জায়গায় সেই সময়।

The forest behind Tourist Lodge

Mangroves at the back side of the Tourist Lodge
সব মিলিয়ে যেই চারটি জিনিসের আকর্ষণে আমার পিয়ালী দ্বীপে আসা, তার থেকে অনেকটাই বেশি মন উজাড় করে আমার ভ্রমণের পিপাসা মেটালো এই পিয়ালী দ্বীপ।

Hi! I am from Kolkata, India. Travelling and photography is my passion. As I love landscape photography most, travelling goes hand in hand with it. Since my matriculation days I started travelling. I have also penned down a book on my travelling which is available in Amazon in the name of Ghuranchandi – Part 1. Whatever travel experiences I have, I have shared those in my blog in the form of travel stories.