Skip to content
Home » অমৃতধারার খোঁজে ভাটিন্ডার ভাণ্ডারে

অমৃতধারার খোঁজে ভাটিন্ডার ভাণ্ডারে

Bhatinda Fall Jharkhand
Share this in your social media

১:

বর্ষায় জলপ্রপাতের সৌন্দর্য উপভোগ করার বিষয়টা অনেকটা  ঝড় ও বৃষ্টির রাতে বসে গরম খিচুড়ির সঙ্গতে ইলিশ মাছ ভাজা খাওয়ার মতন। অনেক পরিকল্পনা করেও যখন কিছু পারিপার্শিক কারণে রাঁচিটা গিয়ে উঠতে পারলাম না, মন টা বেশ খারাপই হয়ে গেল। দেখতে দেখতে পূজো শেষ। অক্টোবরের শুরু। বর্ষারও বিদায় নেবার পালা। অবশেষে দশম, জোহনা, হুনড্রু, সীতার হাতছানিকে এই বছরের জন্য অগ্রাহ্য করে…স্বল্প পরিচিত ভাটিন্ডার আহ্বানেই সারা দিলাম ।

২:

ব্ল্যাক ডায়মন্ড লেট করায় প্রায় ১১.৪০ নাগাদ পৌঁছলাম ধানবাদ স্টেশনে। Jharkhanad Tourism এর Ratan Vihar  বড় রাস্তার ওপরেই অবস্থিত। অনলাইন বুকিং আগেই করে রেখেছিলাম ( http://jharkhandtourism.gov.in ). মিনিট দশেক হেঁটেই পৌঁছে গেলাম রতন বিহার। কোলকাতা থেকে গরম অনেকটাই বেশি এদিকে। স্নান খাওয়া সেরে ৩ টা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম।

৩:

অটো ওয়ালার সাথে দরদাম করে ঠিক করলাম ৬০০ টাকাতে ভাটিন্ডা এবং বিরসা মুন্ডা পার্ক, এই দুটি জায়গা আজ ঘুরবো। হোটেল থেকে ১৭ কিমি রাস্তা ভাটিন্ডা। এখানকার অটো মানে বড় অটো বা টেম্পো। ১০ জন বসে যেতে পারে। স্টেশন চত্বর ছাড়িয়ে কিছুটা এগোতেই আশপাশের দৃশ্য কিছুটা বদলাতে লাগলো। রাস্তার দুধারে দূরে চোখে পড়ছে কয়লার উঁচু ঢিবি। ওপাশে বোধয় মাইন গুলো আছে। আকাশে বাতাসে এক অদ্ভুত ঘন ধোঁয়াটে ভাব। অনেকেই দেখছি নাকে মুখে কাপড় মুড়ে যাতায়াত করছে। কোল মাইনস এর বিষাক্ত ধোঁয়ার মধ্যে দিয়েই পুটকি বাজার ছাড়িয়ে চলে এলাম মুনডিহি । এর পরের রাস্তা টা বেশ সুন্দর। গ্রামের মধ্যে দিয়ে রাস্তা। শেষ ৩-৪ কিমি মেঠো রাস্তা। এবড়ো খেবড়ো রাস্তা দিয়ে লাফাতে লাফাতে এগোচ্ছে বীর বিক্রমে আমার ঝাড়খণ্ডী অটো ওয়ালা, আমার spinal chord এর হাল হকিকতের খবর রাখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে তাঁর নেই। অটোর গোঁ গোঁ আওয়াজ উপেক্ষা করে আমি কান খাড়া করে আছি জলপ্রপাতের আওয়াজের অপেক্ষায়। একটা ডেড এন্ডে এসে অটো থেমে গেল। বোর্ড চোখে পড়লো Bhatinda Waterfalls. নেমে না কোনো waterfalls চোখে পড়লো, না কোনো জলের আওয়াজ। কক্রিটের রাস্তা গিয়ে থেমেছে একটি মন্দিরের সামনে। নির্মীয়মান একটি গেট এবং একটি পার্ক চোখে পড়লো । বুঝলাম জায়গাটির ওপর ঝাড়খন্ড সরকারের সুনজর পড়েছে ইদানিং। মন্দিরের পাশেই একটি ছোট ঘর, তার সামনে বসে মন্দিরের পুরোহিত এবং আরেকটি গ্রামের লোক। উৎকণ্ঠা নিয়ে তাদের দিকে এগোলাম। মন্দির আর ছোট ঘরটির মাঝখান দিয়ে একটি পাথুরে চওড়া রাস্তা ঢালু হয়ে নেমে গেছে। Falls কোথায় জিজ্ঞেস করায় এদিকেই ইশারায় দেখালো পুরোহিত। নামতে থাকলাম সেই রাস্তা দিয়ে।

Bhatinda falls jharkhand temple

Temple on the way to fall

Bhatinda falls Jharkhand first view

The first view

Bhatinda falls jharkhand three tier

Layers of Bhatinda falls

৪:

৮-১০ পা এগিয়েই…সামনে যা দেখলাম তাতে আমি বাকরুদ্ধ !!! সুবৃস্তিত ভাটিন্ডা জলপ্রপাত তার সমস্ত সৌন্দর্য কলতান  নিয়ে আহ্বান করছে আমাকে। পাথুরে রাস্তা টা যেন সেই সৌন্দর্যেরই একটি অঙ্গ।

Bhatinda falls jharkhand rocks

Rocks of Bhatinda fall

এতটা সহজে approachable এই জলপ্রপাত, ভাবাই যায় না। এ যেন এক সুবিশাল ফোটো ফ্রেম রাখা আমার সামনে। অতি ক্ষুদ্র আমি, সেই ফোটো ফ্রেম এর আয়তনের তুলনায়। বাড়ির দেওয়ালে টাঙানো ফোটো ফ্রেমের সাথে এটার তফাৎ হলো, এটিতে আমি ইচ্ছে করলেই যেন ঢুকে পড়তে পারি….সেই স্বপ্ন দেশে। সত্যি ভাবাই যায়না, মূলত শিল্প বাণিজ্য ভিত্তিক এই শহরের এত কাছে এমন সুন্দর এক প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য!

Bhatinda fall Jharkhand

৫:
এগিয়ে গেলাম আরও কাছাকাছি। 3 tier waterfalls বলা হয় ভাটিন্ডাকে। আক্ষরিক অর্থেই তাই। পরিষ্কার বোঝা যায় তিনটি ধাপে জলপ্রপাত টি নেমে এসে বয়ে চলেছে সমতলে।

Three tiers of Bhatinda falls Jhrkhand

Three tiers of Bhatinda fall

উচ্চতা কম, কিন্তু চওড়া অনেকটা। পাথর গুলো এতটাই সহজে approachable যে মনে হতেই পারে একেবারে জলের উৎসর মাঝখানে চলে যাই, কিন্তু ওই ভুলটি না করাই ভালো। আগেই মন্দিরের সেই পুরোহিত এই বিষয় সতর্ক করে দিয়েছে আমাকে। আর তাছাড়া, সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার কোনো দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না। ফটোগ্রাফির জন্যও জায়গাটি স্বর্গ। শেষবেলায় সোনালী রৌদ্র গায়ে মেখে অনর্গল বয়ে চলেছে ভাটিন্ডা। যেন গলানো সোনা নেমে আসছে ওপর থেকে।

Bhatinda falls Jharkhand like molten gold

Molten gold

Bhatinda falls Jharkhand cascade

Cascading Bhatinda waterfall

চারিদিকের সবুজে আর পাখিদের কলকাকলির মাঝে এক নৈসর্গিক পরিবেশের মাঝে এখন আমি একা। আর একটিও টুরিস্ট চোখে পড়লো না। কিভাবে যে দু ঘন্টা কেটে গেলো টেরই পেলাম না। ND filter সঙ্গে নেই, তাই আলো আরো ক্ষীণ হওয়া অব্দি অপেক্ষা করলাম। প্রাণ ভরে বিভিন্ন angle থেকে ক্যামেরা বন্দী করলাম ভাটিন্ডাকে। ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করছে না এই সৌন্দর্য। তবে এই নির্জন জায়গায় অন্ধকার অব্দি না থাকাই ভালো।

৬:
ওপরে উঠে এসে এগোলাম বিরসা মুন্ডা পার্কের দিকে। পৌঁছতে পৌঁছতে পুরো অন্ধকার হয়ে গেলো। তবে পার্ক খোলা থাকে ৭.৩০ টা অব্দি। এখানেও টিকিট করে ঢুকতে হলো। বিশাল চত্বর এই পার্কের। সুন্দর ভাবে সাজানো। তবে বৈদ্যুতিক আলোতে একটু কৃত্রিমই লাগছিলো ভেতরে। অল্প কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে ফিরে এলাম রতন বিহারে।

Bhatinda falls Jharkhand Dhanbad Birsa Munda park gate

Bisa Munda park gate

Bhatinda falls Jharkhand Dhanbad birsa munda park statue

Statue of Birsa Munda

Bhatinda falls Jharkhand Dhanbad birsa munda park

Birsa Munda park

৭:
পরদিন ১২ টায় চেকআউট করে চলে এলাম হিরাপুর বাজারে। ফিরতি ব্ল্যাক ডায়মন্ড বিকেল ৪.২৫ এ। হাতে অফুরন্ত সময়। হিরাপুর এ তিওয়ারি হোটেলের কষা মাংসের কথা অনেকের মুখেই শুনেছিলাম। রিকশা ওয়ালাকে বলতেই নিয়ে এলো তিওয়ারিতে। লাঞ্চ টা এখানেই সেরে বেশ কিছুক্ষন হিরাপুর এর বাজারের অলিগলি তে ঘুরে সময় কাটালাম দীপাবলির বিকিকিনি দেখতে দেখতে। কোলকাতার কাছাকাছি এত সুন্দর এই ভাটিন্ডা জলপ্রপাত….অথচ অনেকেরই হয়তো জানা নেই,  এটাই বারবার মনে হচ্ছিলো ফেরার ট্রেনে বসে। একটুকরো বিকেল আরও অনেকবার কাটিয়ে দেওয়া যায়, নিভৃতে বসে এই  ভাটিন্ডার কোলে  ।

© Arijit Kar

0 0 votes
Article Rating

I am eager to know your views on this post. Please leave a reply

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
error: Content is protected !!
%d bloggers like this: